বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯

মা জননী

            আল মাহমুদ বিপ্লব

মায়ের সাদা কাফন

(৩০ শে জুলাই,২০১৮ ইং, সুবহে সাদিকের সময় আমার প্রিয় মা চলে যায় চিরতরে।তাঁরই স্মরণে নিচের লেখাটি। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি প্রিয় জননীকে)
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অনেকদিন আগে ইউটিউবের ইসলামিক সংগীতের একটি চ্যানেল থেকে নিচের গানটি শুনেছিলাম, মায়ের কথা মনে পড়ার সাথে সাথে গানটি আবারও মনে পড়লো-
"পৃথিবীর একপাশে মাকে রেখে,
অন্য পাশেও মাকে রাখি।
পৃথিবীর সব কথা ভুলে গিয়ে,
ব্যাকুল প্রাণে মাকে ডাকি।
জীবনের সবখানে, সবগানে,
মাকে ছাড়া জীবনের নেই মানে।
মা হীন এলোমেলো হৃদয়ে,
আর কোন ঠিকানা কেউ কি জানে।"
সত্যি! মা ছাড়া কেউ মনের কথা বুঝে না,বুঝতে পারে না। মানুষ মরণশীল।এটা মেনে নিতেই হবে।সবকিছু কবরস্থ করা যায় না।
কিছু কিছু মৃত্যুর বেদনা ভুলা যায় না।
আমি সবাইকে ভুলতে পারলেও,সব স্মৃতি ভুলতে পারলেও, আমার মায়ের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলোকে কোনোদিনই ভুলতে পারবো না। আমার মায়ের সাথে কাটানো অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে । সেসব স্মৃতির পাতা থেকে কিছু লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করে মনটাকে হালকা করতে চাই। আমি কেন মায়ের জন্য এতো পাগল তা নিচের কয়েকটি ঘটনা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
#আমার মনে পড়ছে একদিন মা বলেছিল, আমার বড় ভাই ১৯৮৫ সালে মারা যাওয়ার পর মা ভূমিষ্ট করে দুটি মেয়ে ,তারপর ৪ বছর পর আমাকে ও ৭ বছর পর ছোটবোনকে ভূমিষ্ট করে । আমি ভূমিষ্ট হওয়ার আগে মা মান্নত করে বলেছিল,"আমার আবার একটি ছেলে হলে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আল্লাহর কাছে সপ্তাহে ১ টি করে নফল রোযা পালন করবো।
কথায় নয় বাস্তববিকভাবে তা করেছিল, মা আমার জন্য দীর্ঘ ২৫ টি বছরের প্রতিটি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিন নফল রোযা পালন করেছে।
মাকে বলতাম,মাগো এত রোদ্রে রোযা রেখো না,শরীর খারাপ করবে,মা হেসে বলতো আরে বোকা ছেলে কিচ্ছু হবে না।বলতো এ নিয়ে তুই ভাবিস না,ঠিক মতো পড়াশোনা কর।
#আমাদের একসময় ভালো আর্থিক অবস্থা ছিল।পরে অভাবের সংসার হয়,
যার কারণে আমাদের চার ভাইবোনদের সব চাহিদা বাবা পূরণ করতে পারতো না। মা অনেক কিছু ত্যাগ করে আমাদের সব চাহিদা পূরণ করতো।
মনে পড়ে ২০০৩ সালে একদিন বায়না ধরেছিলাম- আমাকে মকমলের কাপড় কিনে দিতে হবে, না হলে স্কুলে যাবো না।সেসময় মকমলের কাপড় অনেক দামী ছিল। সেটার দাম ছিল ৩৮০০ টাকার মতো।
বাবাকে বলা মাত্রই বলেছিল, চুপ থাক,বেশি প্যাঁচাল পারবি না।টাকা নাই দিতে পারমু না।
মা তা দেখে বুকে টেনে নিয়ে বলেছিল,আমি মকমল কাপড় কিনে দিবো তোকে, স্কুলে যাওয়া বাদ দিবি না। সত্যি! মা,সেদিন ছাগল বিক্রি করে আমাকে মকমলের কাপড় কিনে দিয়েছিল। অথচ মায়ের পরনে তেমন ভালো কাপড় ছিল না।আমি বলেছিলাম,মাগো! তুমি একটা কাপড় কিনে নিয়ো।মা বলেছিল,আমার অনেক কাপড় রয়েছে।নিজের জন্য কোনদিন ভালো কোনো কাপড় কিনেনি।যা করতো সব আমার জন্য।মাঝেমধ্যে জোর করে নতুন কাপড় কিনে দিতাম। আজো মায়ের দেওয়া মকমলের কাপড়টি যত্ম রেখে দিয়েছি। দেখামাত্রই চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
#মা শিখিয়েছে ধার্মিকতা।
আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি আল্লাহ ও রাসুল, মসজিদ,নামাজ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতাম না।
মা আমাকে কুরআন তেলওয়াত শিক্ষা দিয়েছিল। আমি একটু জেদি ছিলাম, টাকা ছাড়া স্কুলে যেতাম না। মা বলতো,নামাজ পড়লে ফেরেস্ততারা সদাই খেতে টাকা দেয়।নামাজ পড়ার পর জায়নামাজের নিচে মা পাঁচ টাকা রেখে দিতো, যেন নামাজ পড়ি।আমি পরে বুঝেছি যে মা টাকা রেখে দিয়েছিল।
মাগো! আমি সত্যি! ধন্য যে তুমি আমাকে নামাজী বানিয়েছো।
#মা আমাকে শিখিয়েছিল মানবতাবোধ।উদ্ধুদ্ধ করেছে মানব হিতৈষী কাজে।একদিন বালিজুড়ি হাইস্কুল মাঠে একজন পাগলির মৃত দেহ পড়েছিল। তার সর্বাঙ্গে ছিল পোকা, দেহ ঘায়ে ভরা। কেউ তাকে গোসল করাতে চাইলো না।আমি সেদিন দেখেছিলাম আমার মা নিজহাতে পাগলটিকে গোসল করায়ে নিজ হাতে কাফনের কাপড় পড়িয়ে দেয়।অনেকেই তাকে হেলা করতে শুরু করে।মা বলতো,আমি ঠিক কাজ করেছি,এরকম সবারই করা উচিত।আমাকে বলতো,যখনই কারো বিপদ দেখবি সাধ্যানুযায়ী পাশে দাঁড়াবি।মাগো! আমি তোমার নিকট থেকে মানবতাবোধের বাস্তব চিত্র শিখেছি।
#আমার মায়ের দুটি বিশেষ গুণ ছিল, তিনি সুস্বাদু রান্না তৈরি ও অপরকে মেহমানদারিতে পরিতৃপ্ত হতেন।
।এমন নারী এ সমাজে এখনো কি আছে ?
আমি মনে করি তেমন নেই। আমার মা এজন্য সবার চেয়ে অনন্য ছিল। আমার মা এজন্য সবার মন জয় করেছিল।
এরকম হাজারো স্মৃতির পিরামডি তৈরি করে চলে গেলো মা।
পৃথিবীতে একটি নাম মা। নামটি ছোট হলেও এর তাৎপর্য ও গভীরতা অনেক বেশি।
যে নামে রয়েছে অমৃত সুধা। যে নামের প্রশংসার কথা অবিরত লিখলেও শেষ হবে না।যে নামের দোয়ায় প্রভুর কাছে রয়েছে সফলতা ।
যে নামের বদদোয়ায় রয়েছে বিফলতা।
এ জীবনের সফলতা,বিফলতা নির্ভর করে পিতামাতার দোয়ার উপর। পৃথিবীতে প্রতিটি পিতামাতা তার সন্তানের নিকট মহাদামী সম্পদ।
এ সম্পদ দুটির যারা পরিপূর্ণ হক আদায় করে তারাই প্রকৃত সন্তান।পৃথিবীর বুকে পিতামাতার প্রতি সন্তানদের ভালবাসা ভিন্ন হলেও, সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালবাসা অভিন্ন।সন্তানের ভালবাসা লোক দেখানো হতে পারে,কিন্তু পিতামাতার ভালবাসা নিষ্কলুষ। মাতাপিতার দুজনের মধ্যে মায়ের মর্যাদা বেশি। কেননা,মা সন্তানকে পেটে ধারণ করে, কষ্ট ভোগ করার পর প্রসব করে, তারপর অনেক প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে সন্তানকে গড়ে তুলে। পৃথিবীতে সেই তো হতভাগ্য যার মা নেই। আমিও তেমন একজন হতভাগ্য।
★৩০/৭/১৮ ইং আমার জীবনে একটি বেদনাবিধুর তারিখ, সেই তারিখের রাত-২:৩০ ঘটিকার সময় আমাদের চার ভাইবোনকে কাঁদিয়ে মা চিরদিনের জন্য চলে যায় না ফেরার দেশে। মা,অনেকদিন যাবত তিনটি কঠিন মরণব্যাধিতে ভুগছিল,কিন্তু মুখ খুলে তা বলেনি। যখন তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে একদম অসহ্য হয়ে উঠেছিল তখন তিনি রোগের কথা বলেন। ততক্ষণে রোগ তিনটি নিরাময়ের বাইরে চলে গিয়েছিল। তারপরেও তা শুনামাত্রই আমরা তাকে নিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করি। মাদারগঞ্জ, জামালপুর,বগুড়া,ঢাকার নামকরা হাসপাতালসহ আরো অনেক জায়গায় নিয়ে যায়। এসব প্রতিটি জায়গায়  আমার বড় বোন,মেঝো বোন,হাকিম ভাই, এরশাদ ভাই, রিক্তা ভাবি ও বড় মামীর ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।
যাহোক,যেখানেই গিয়েছি প্রচুর টাকা খরচ আর চিকিৎসার নামে টেষ্ট বাণিজ্যে পড়েছি। কিন্তু রোগীর তেমন ট্রিটমেন্ট তারা করেনি।যা করেছে ডাক্তারেরা তা দ্বারা ওরা টাকা লুটে নিয়েছে। ডাক্তারেরা যে কি পরিমাণ মানবতাবিরোধী তা বুঝতাম না, যদি বিপদে না পড়তাম।সর্বশেষে মাকে নিয়ে গেলাম বাংলাদেশের
সর্বোচ্চ চিকিৎসালয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১ মাস  থাকার পর একেরপর এক টেষ্ট করা শেষ করে তারা ফাইনাল রির্পোট দিলো যে, আমার মা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার বাঁচার সম্ভাবনা নেই। ডাক্তারেরা রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে দিলো । দৌড়াদৌড়ি ও অনেক টাকা খরচ,ত্যাগ-তিতিক্ষা করেও কোনরুপ কাজ হলো না। ব্যর্থ মনোরথে মাকে আগের তুলনায় আরো বেশি মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এলাম। প্রচন্ড ব্যথায় মা তখন ছটফট করছে। অজস্র মানুষ মায়ের জন্য দোয়া করলো। তাঁর অসুস্থতা আরো তীব্র হতে লাগলো এক পর্যায়ে কথায় বলতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিলো , এমন পরিস্থিতেও তিনি আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে দিলো।
চার ভাইবোনকে একত্রিত করে সবাইকে শেষ আদর করে দিলো আর বাকি সময় আল্লাহু নামের জিকির করতে করতে চললো তিনটি দিন। এক পর্যায়ে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল পরপারে। আমাদের ভাইবোনকে চির ইয়াতীম করে চলে গেল মা। চোখের সামনে ছটফট করে মা মারা গেল, চার ভাইবোন তেমন কিছুই করতে পারলাম না। এখানে সবাই অসহায়, নির্বাক, বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা,বিধাতার বিধান, না মেনে কোন উপায় নাই। শেষ বিদায় জানিয়ে মাকে রেখে এলাম নির্জন নিরালায় একলা অন্ধকার ঘরে। মা আর কোনদিন আমাকে ভাত খেতে ডাকবে না আর খোঁজ নিবে না। মা যে চিরদিনের জন্য নিশ্চুপ হয়ে চলে গেল নিরব অভিমানে। মাগো,আমাদের চার ভাই-বোনকে মাফ করে দিয়ো, তোমার জন্য তেমন কিছুই করতে পারলাম না। তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না।আমরা নির্বাক হয়ে গেলাম বিধাতার বিধানের কাছে। এ এক নিঃসীম বেদনা।

শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৯

সী-মোরগ


সী-মোরগ: (১)
ইরানের ধ্রুপদী সাহিত্যে কিংবা রূপকথায় এই সী-মোরগ বিভিন্ন রূপে ও প্রতীকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।
এক গরীব লোক তার বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে বাস করতো। কাজকর্ম ছিল না তার। ভবঘুরে জীবনযাপন করতো। কিন্তু এভাবে তো আর জীবন চলে না। অবশেষে তার স্ত্রী ক্লান্ত বিরক্ত হয়ে গিয়ে একদিন তাকে বললো: “অনেক তো হলো! বেকার ঘুরে আর কতদিন কাটাবে। ভবঘুরে হয়ে কাটালে তো জীবন চলবে না। এভাবে কোনো ফায়দা নেই। বরং যাও! কাজকর্ম খুঁজে বেড়াও”! লোকটা ভাবলো কথা তো মন্দ না। বৌ তো ঠিকই বলেছে। বেচারা অগত্যা বেরিয়ে পড়লো কাজের খোঁজে। এখানে সেখানে কতখানে যে গেল, কোনো লাভ হল না। কাজের সন্ধান পেল না। কী করা যায়! এই বেকারমূর্তি কিংবা নিলাজ চেহারা কী করে বৌকে দেখানো যায়! ছি ছি করবে বৌ! বৌয়ের মুখের তিরস্কার কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। শুনতে চায় না তার মুখনিসৃত পবিত্র সুখহানিকর বাণী।
বিষন্ন মনে লোকটা গেল সমুদ্রের দিকে। তীরে দাঁড়িয়ে ভাবলো এই অপয়া জীবনের কোনো মূল্য নেই। মূল্যহীন জীবন না রেখে বরং ওই সমুদ্রের পানিতে আত্মাহুতি দেয়াই শ্রেয়। বৌয়ের যন্ত্রণা আর তিরস্কার শুনতে হবে না। কাজের খোঁজে বেকার ঘুরে ঘুরে হতাশার সাগরে ডুবতে হবে না। এই সাগরে একবার ডুবে মরলেই ল্যাঠা চুকে যাবে। এই ভেবেই সে সোজা নেমে গেল সমুদ্রের তরঙ্গময় পানিতে। কিন্তু ডুবে মরা কি এতই সহজ! না। ডুবতে গিয়েও ডুবতে পারলো না। কেবলি ভেসে উঠছিল তার শরীর। এমন সময় সমুদ্রের উপর থেকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল একটি সী-মোর্‌গ। সী-মোর্‌গ দেখছিল একটা লোক ডুবে মরার চেষ্টা করছে। সে দ্রুত নীচে নেমে এলো এবং তার নখের পাঞ্জায় লোকটাকে আটকে তুলে নিয়ে গেল পানি থেকে।
সী-মোর্‌গ আশ্চর্য এক পাখি। ইরানি রূপকথার জগতে বহুকাল ধরে বিচরণকারী এই পাখিটি অদ্ভুতরকমভাবে কথা বলতে জানে এবং মানুষের অবস্থাও বুঝতে পারে। আমরা তাই রূপকথার অন্যতম উপাদান এই পাখিটির নাম পাল্টাবো না, সী-মোর্‌গই বলবো। তো পাখিটি লোকটাকে ভালো করে নিরীক্ষণ করে দেখলো তার আপাদমস্তক হতভাগ্যে পরিপূর্ণ। সী-মোর্‌গ দ্রুত উড়ে গিয়ে সমুদ্র থেকে একটা বড় মাছ ধরে নিয়ে এলো এবং মাছটা লোকটার হাতে দিলো। লোকটা খুশি হয়ে মাছটা নিয়ে ফিরে যেতে মনস্থির করল নিজ শহরের দিকে। সেখান থেকে বাসার দিকে যেতে পথে দেখা হলো বদমাশ ধরনের এক লোকের সাথে। দুষ্ট লোকটার নজর পড়লো সুন্দর ওই মাছের ওপর। সে দশ সির আটার বিনিময়ে মাছটা নিয়ে নিতে চাইলো। প্রাচীন পরিমাপে দশ সির এখনকার এক কেজি’র চেয়ে কিছু কম,পৌনে এক কেজির মতো হয়। কিন্তু হতভাগ্য লোকটা তাতেই খুশি হয়ে মাছটার বিনিময়ে ওই দশ সির আটা নিয়ে নিলো।
আটা নিয়ে বাসায় ফেরার পর তার বৌ বললো: “এই কাজটা আরও আগে করলে কী হতো! প্রতিদিন এই পরিমাণ আটা নিয়ে এলেই তো চলে। বাচ্চাদেরও খিদে মিটে যায় আর কান্নাকাটি করে না”। বৌয়ের কথা শুনে লোকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ভালোভাবেই ঘুমিয়ে কাটালো রাতটা। পরদিন আবার সে গেল বাজারের দিকে কাজের সন্ধানে। কিন্তু আজও কোনো কাজ তার ভাগ্যে জুটলো না। অবশেষে আবারও সে অভিশপ্ত এই জীবন ধ্বংস করার জন্য মানে আত্মহত্যা করার উদ্দেশে সমুদ্রের দিকে গেল এবং গতকালের মতোই পানিতে যুবে মরতে চেষ্টা করলো। কিন্তু আজও সৌভাগ্যক্রমে ওই সী-মোর্‌গ এসে তাকে উদ্ধার করলো। গতকালের মতো আজও একটা মাছ ধরে এনে দিলো তাকে।

কিন্তু আজও একই ঘটনা ঘটলো। দুষ্ট লোকটা পথের মোড়ে বসে ছিল এবং সামান্য আটার বিনিময়ে মাছটা নিয়ে গেল। বাসায় ফেরার পর আজও তার স্ত্রী যখন দেখলো স্বামি তার খালি হাতে ফেরে নি তখন তাকে বললো: একেই বলে পুরুষ! প্রতিদিন সন্ধ্যায় এতটুকু আটা এনে দিলেই তো বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়,আর কোনো টেনশন থাকে না। লোকটা মানে মহিলার স্বামী কোনো উত্তর দিলো না। বললো না কোত্থেকে কীভাবে এই আটার ব্যবস্থা হচ্ছে। রাতটা কাটিয়ে পরদিন সকালে আবারও এক বুক আশা নিয়ে শহরের দিকে গেল। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাজারের অলিগলি দোকানপাট সর্বত্র ঘুরেও একটা ছোটোখাটো কাজও জোটাতে পারলো না। অগত্যা চলে গেল সেই আগের দিনের মতো সমুদ্রের দিকে। গভীর পানিতে নেমে ডুবে মরতে চাইলো।
ঘটনাক্রমে আজও সেই সী-মোর্‌গ এসে দেখলো সেই লোকটাই ডুবে মরতে চাচ্ছে। সী-মোর্‌গ ভাবলো এই লোক মনে হয় তার জীবনের ভার সহ্য করতে পারছে না। সুতরাং তার মরে যাওয়াই ভালো। যে বারবার মরে যেতে চায় তাকে উদ্ধার করার কী দরকার। এটা বোধ হয় লোকটার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই মরতে আসে। যাক মরুক গে,আমার কী! কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো: যদি সত্যি সত্যিই লোকটা মরে যায়! তাহলে কী হবে। এই ভেবে লোকটার দিকে তাকাতেই দেখলো লোকটা সত্যিই আত্মহত্যাই করতে চাচ্ছে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! এভাবে তার চোখের সামনে যদি কেউ মরে যায় আর সে যদি তাকে না বাঁচায় তাহলে তো তার মৃত্যুর জন্য সে-ই দায়ী থেকে যাবে! কারো মৃত্যুর দায়ভার সী-মোর্‌গ নিতে চায় না,তাই লোকটাকে আজও পানি থেকে তুলে নিয়ে বাঁচালো এবং আগের দিনগুলোর মতোই একটি মাছ তুলে এনে তার হাতে দিলো।
কিন্তু সী-মোর্‌গের মনে হলো এই হতভাগ্য বোধ হয় জানে না এই মাছের কী মাহাত্ম্য। সেজন্য বললো: নিজেকে কেন পানিতে ডুবিয়ে মারতে চাও? তোমাকে যে প্রথম মাছটি আমি দিয়েছিলাম ওই একটা মাছই তো তোমার সাত প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট ছিল! তারপরও কেন মরতে আসো?
সী-মোরগ: (২)
ইরানের ধ্রুপদী সাহিত্যে কিংবা রূপকথায় এই সী-মোরগ বিভিন্ন রূপে ও প্রতীকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। এক গরিব লোক সংসারের ভার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার আশ্রয় নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে ডুবে মরতে চাইলে সী-মোরগ পরপর কয়েকবার তাকে উদ্ধার করে একটি করে মাছও তার হাতে দিয়ে দেয়। লোকটির কাছ থেকে ধুরন্ধর এক ব্যক্তি সামান্য আটার বিনিময়ে ওই মাছ নিয়ে নেয়।
তৃতীয়বারের মতো এই ঘটনা ঘটলে সী-মোরগ বিস্ময়ের সঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করে: তোমাকে যে প্রথম মাছটি আমি দিয়েছিলাম ওই একটা মাছই তো তোমার সাত প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট ছিল! তারপরও কেন মরতে আসো?

সী-মোরগের প্রশ্নের জবাবে এবার আত্মহত্যা করতে যাওয়া লোকটি বললো: প্রথম মাছটির বিনিময়ে সামান্য আটা নিয়ে বৌয়ের হাতে দিয়েছি। দ্বিতীয় মাছটিও সেরকমই সামান্য আটার বিনিময়ে নিয়ে নিয়েছে এক লোক। সেই আটায় রুটি বানিয়ে বাচ্চাদের দিয়েছি। এটা কি কোনো জীবন হলো? আমার কপালটা এমন কেন!
সী-মোরগ বললো: কপালের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তোমাকে যে মাছগুলো দিয়েছি সেগুলোর পেট ছিল সোনা-রূপায় ভর্তি।
শুনেই লোকটির বুক থেকে দীর্ঘ একটি শ্বাস বেরিয়ে গেল আকাশের শূন্যতায়। এবার যে মাছটি তার হাতে আছে ভালো করে সেটিকে ধরলো এবং ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
কিন্তু আজও পথের মোড়ে সেই প্রতারক ধোঁকাবাজ লোকটি তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। যখনই সে দেখতে পেল আরেকটি মাছ নিয়ে লোকটি বাসার দিকে ফিরছে সামনে এগিয়ে গিয়ে আগের মতোই বললো: দাও, মাছটা দাও আর তার বিনিময়ে এক মুষ্টি আটা নিয়ে যাও। প্রস্তাব শুনে লোকটি আজ হাসলো। প্রতারক লোকটি বললো: ঠিক আছে,দুই মুষ্টি দেবো। এবারও হাসলো। প্রতারক এবার তিন মুষ্টি,চার মুষ্টি.. এভাবে বাড়াতে লাগলো। কিছুতেই আজ লোকটি তার মাছ দিতে চাইলো না। প্রতারক লোকটি বুঝতে পারলো যে আজ কোনো একটা ঘটনা ঘটেছে। বললো: ঠিক আছে এক হাজার দিনার দেবো,দাও।
লোকটা তারপরও মাছ বিক্রি করতে রাজি হলো না। এবার প্রতারক লোকটা মাছওয়ালার কলার টেনে ধরলো। শুরু হয়ে গেল হাতাহাতি থেকে মারামারি।
মারামারির এক পর্যায়ে টহলরত পেয়াদারা এসে দুজনকেই ধরে নিয়ে গেল বাদশার দরবারে। বাদশাহ তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা দেখে জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে তোমাদের? চীৎকার করছো কেন? জবাবে মাছ হাতে লোকটি বললো: হুজুর! তিনটি মাছ আমি পেয়েছি। মাছগুলোর পেট সোনারূপায় পরিপূর্ণ। ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা অভুক্ত। এই প্রতারক আমার কাছ থেকে পরপর দুদিন দুটি মাছ নিয়ে আমাকে প্রথমদিন দিয়েছে এক মুষ্টি আটা। দ্বিতীয় দিন একটি মাছের বিনিময়ে দিয়েছে সামান্য আটা। আজও সে এই তৃতীয় মাছটিও নিতে চায়। আমি দিতে চাচ্ছি না বলেই সে আমাকে মারার চেষ্টা করছিল।
বাদশাহ এবার আগের দুটি মাছ নিয়ে আসার জন্য আদেশ দিলেন। মাছগুলো নিয়ে আসার পর সেগুলোর পেট ফাঁড়তেই বেরিয়ে এল জ্বলজ্বল সোনারূপা। এগুলো দেখে তো বাদশাহ হতবাক। দুই ঠোঁটে আঙুল কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। মনে মনে বললেন: খোদার কী কুদরত! মাছের পেটে এতোসব সোনা-জহরত...!
বাদশাহ এবার লোকটাকে তার মাছগুলো বুঝিয়ে দিয়ে বললেন: সত্যি করে বলো তো! এই মাছগুলোর রহস্য কী! কোত্থকে এনেছো এগুলো? লোকটি এবার তার সাংসারিক দুরবস্থার বিবরণ তুলে ধরলো এবং বললো খাবার জুটাতে না পেরে সমুদ্রে ডুবে মরতে চেয়েছিল। সী-মোরগ তখন তাকে বাঁচিয়েছিল এবং পরপর তিনদিন সী-মোরগ তাকে একটি করে মাছ এনে দিয়েছিল তার হাতে। এসব শুনে বাদশা বললো: যাও! ওই সী-মোরগটাকে নিয়ে আসো আমার কাছে।
মাছগুলো ফেরত পেয়ে যতটুকু আনন্দিত হয়েছিল লোকটি এবার তারচেয়েও বেশি কষ্ট পেয়ে ব্যথা বুকে লালন করে খালি হাতে ফিরে গেল বাড়িতে। মনে মনে ভাবলো, হায় কপাল! ভাগ্য আমার উন্নতির পথে আবারও বিশাল পাথর এনে ফেলে রেখেছে। কী যে করি!
বাসায় ফিরতেই তার বৌ রেগেমেগে জিজ্ঞেস করলো: কী হলো আবার! খালি হাতে ফিরলে যে! আটা কই! লোকটি বললো: শান্ত হও বৌ! সব বলছি।
এই বলে যা যা ঘটেছিল সব ঘটনা বৌ সে খুলে বললো। সবশেষে বললো: বাদশাহ এখন আমাকে ওই পাখিটাকে মানে সী-মোরগকে তার কাছে এনে দিতে বললো। এখন কী করি বলো! আমি সী-মোরগকে কী করে ধরবো আর বাদশার কাছে নিয়ে যাবো!
কথা শুনে বৌয়ের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে ভাবতেই চাইলো না তার স্বামীর কপালে কী দু:খ এসে ভর করেছে। সে বরং ভাবলো যাক এবার বুঝি তার কষ্টের দিন শেষ হতে যাচ্ছে। তার চোখেমুখে সোনার ঔজ্জ্বল্য চকমক করতে লাগলো।
বেচারা লোকটি কোনোরকমে রাতটা কাটিয়ে সকালে সূর্য উঠতেই বাড়ি থেকে বের হলো। ভেবে কুল পাচ্ছিলো না কী করবে সে। একবার ভাবে এই দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে। তাতে অন্তত এই জটিল পরিস্থিতি আর মানুষগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু তারচেয়ে সহজ বুদ্ধি হলো আগের সিদ্ধান্তে ফিরে যাওয়া মানে সমুদ্রে ডুবে মরা। হয়তো তাতে কোনো উপায় বেরিয়ে আসবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। সোজা সমুদ্রে গিয়ে ডুবে মরতে চাইলো। ঘটনাক্রমে আজও নেই সী-মোরগ আকাশে উড়ছিল। সে দেখলো লোকটি ডুবে মরার চেষ্টা করছে। ভাবলো এর বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। লোভে পেয়েছে ওকে। মরুক গে। এরকম মানুষের মরে জাহান্নামে যাওয়াই ভালো।
সী-মোরগ আর নীচে এলো না। উপর থেকেই দেখছিলো। যখন দেখলো বিশাল বিশাল ঢেউ তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সী-মোরগ ভয় পেয়ে গেল এবং নীচে নেমে এসে তাকে উদ্ধার করলো এবং বললো: আবারও মরতে এসেছো তুমি? যাও! মরতেই যদি চাও এমন জায়গায় গিয়ে ডুবে মরো যেখানে আমি তোমাকে দেখতে পাবো না। লোকটি: আমি মাছের লোভে আসি নি। কেন এসেছি শোনো। এই বলে বাদশার পুরো ঘটনা সী-মোরগকে খুলে বললো।#
সী-মোরগ: (৩)
লোকটির সমস্ত ঘটনা শুনে সী-মোরগ আশ্চর্য হয়ে যায়। ভাবতে পারছিলো না কী করবে সে। মনে মনে ভাবলো যদি বাদশার দরবারে না যায় তাহলে বাদশা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা লোকটাকে ধরে তার গর্দান নিয়ে নেবে।
আর যদি যায় তাহলে তার নিজের বাচ্চা দুটো ক্ষুধায় মারা যাবে। অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো লোকটার সাথেই যাবে বাদশার দরবারে। লোকটা নীচে পায়ে হেঁটে পা বাড়ালো বাদশার দরবারে আর কান্নারত সী-মোরগ শূন্যেই বাদশার প্রাসাদের দিকে চললো।
কিছুদূর যাবার পর দেখা হয়ে গেল বাদশার ছেলে মানে রাজপুত্রের সঙ্গে। রাজপুত্র বা শাহজাদা যাচ্ছিলো শিকার করতে। লোকটাকে দেখে শাহজাদা বললো: কোথায় যাচ্ছো। লোকটা রাজপুত্রের প্রশ্নের জবাবে তার জীবনকাহিনী শুনিয়ে দিয়ে বললো: অনেক কষ্টে ওই সী-মোরগকে রাজি করিয়েছি প্রাসাদে যেতে। কিন্তু সমস্যা হলো সী-মোরগের দুটি বাচ্চা আছে। সে যদি এখন প্রাসাদে যায় বাচ্চা দুটো ক্ষুধায় মারা যাবে। সে জন্য সী-মোরগ ভীষণ উদ্বিগ্ন। বাচ্চাদের জন্য দুশ্চিন্তায় কাঁদছে সে। শাহজাদা সী-মোরগের চোখে অশ্রু দেখে কষ্ট পেলো। লোকটাকে বললো: তুমি সী-মোরগকে ছেড়ে দাও! রাজদরবারে গিয়ে বাদশাকে বলবে যে আমি সী-মোরগকে নিয়ে আসছিলাম কিন্তু শাহজাদার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তার আদেশে আমি পাখিটাকে ছেড়ে দিয়েছি যেন সে বাসায় ফিরে গিয়ে বাচ্চা দুটোকে খাবার দেয়।
সী-মোরগ শাহজাদার নম্রতায় খুশি হয়ে তাকে তার দুটো পালক উপহার দিয়ে বললো: যখনই কোনো সমস্যায় পড়বে এবং সমাধানের কোনো কূলকিনারা পাবে না তখনই এই পালক আগুন দিয়ে পুড়বে আর তখনই আমি এসে হাজির হয়ে যাবো। এই বলে পাখি উড়ে চলে গেল তার বাচ্চাদের কাছে। শাহজাদা তার ঘোড়ায় চড়ে গেল শিকারের সন্ধানে আর লোকটা গেল রাজদরবারের দিকে। রাজদরবারে খালি হাতে যাওয়ায় বাদশাহ ভীষণ ক্ষেপে গেল। লোকটা বাদশাকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করার পর বাদশা এবার ক্ষেপলো শাহজাদার ওপর। বললো: এই ছেলে দেখতে পারে না তার বাবার কাছে একটা সী-মোরগ থাকুক। ওর হাতে বাদশাহির ভার ন্যস্ত করলে কী করবে,কে জানে! শিকার থেকে ফিরে আসুক! সোজা জল্লাদের হাতে তুলে দিয়ে বলবো গর্দান কেটে ফেলতে।
দুদিন পর শাহজাদা ঠিকই ফিরলো শিকার থেকে। সোজা বাবার কাছে গিয়ে হাজির হলো। বাদশাহ সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলো: সী-মোরগকে ছেড়ে দিলে কেন? ওই পাখির পরিবর্তে এখন তোমাকে হত্যা করা হবে।
ছেলে বললো: তুমি আমার পিতা। তোমার যা খুশি করবার অধিকার আছে। তবে আমাকে একটু সময় দাও, মরবার আগে দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ে নিই।
বাদশাহ অনুমতি দিলো এবং শাহজাদা দ্রুত চলে গেল প্রাসাদের ছাদের ওপর। সেখানে সে দু রাকাত নামাজ পড়লো। সালাম ফিরিয়েই সে সী-মোরগের দেওয়া একটি পালকে আগুন ধরাতেই সী-মোরগ উড়ে এসে হাজির হয়ে গেল। শাহজাদা বললো: বাদশাহ মানে আমার বাবা চাচ্ছে আমাকে হত্যা করতে। কারণটা হলো তোমাকে মুক্তি দেওয়া। সী-মোরগ এ কথা শুনেই তার পাখা বিস্তার করে দিলো। শাহজাদা পিঠে সওয়ার হলো এবং পাখি উড়ে গিয়ে সোজা পার্শ্ববর্তী শহরের একটি বাড়ির দরোজার পাশে পৌঁছে তাকে নামিয়ে দিলো।
শাহজাদা এগিয়ে গেল ঘরের দিকে। দেখলো এক বুড়ি বসে আছে ভেতরে। বুড়িকে বললো: আমি এখানে নতুন এসেছি,অপরিচিত মানুষ, কাউকে চিনি না জানি না। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। আপনার ঘরে কি এই রাতটা কাটানোর সুযোগ হবে? সকালেই চলে যাবো।
বুড়ি বললো: না, জায়গা নেই। আমার ঘরটা পাখির বাসার মতোই ছোট। কটা দুম্বার বাচ্চা গরু আর গাধার বাচ্চাও আছে।
শাহজাদা কটা সোনার কয়েন বুড়ির হাতে দিতেই বুড়ির অবস্থা পাল্টে গেল। বললো: আমার ঘরে বাদশার এক বাহিনীর জায়গা হবে। আমি একা বৈ ত নই। শাহজাদা গেল বুড়ির ঘরের ভেতর। সেখানে কয়েকদিন কাটালো। একদিন গেল শহরের ভেতরের কী খবরাখবর,জানতে। বুড়িকে জিজ্ঞেস করলো: তোমাদের শহরে কি দুজন বাদশাহ?
বুড়ি বলল: হ্যাঁ! বাদশাহ এবং শাহজাদি দুজনই এই শহরের নিরীহ লোকজনের শাসক। আমরা হলাম বেচারা জনগণ-খাজনা দিতে দিতেই জীবন শেষ। একবার খাজনা দিতে হয় বাদশাহকে আরেকবার দেওয়া লাগে তার কন্যাকে। শাহজাদা একথা শুনে বলল: হে মা! তুমি তো অনেক করেছো,এবার আমাকে নিয়ে চলো ওই শাহজাদির কাছে। বুড়ি বলল: নিয়ে যেতে পারি। তবে বাদবাকি তুমি সামলাবে। শাহজাদি যদি তোমাকে পছন্দ করে তাহলে তো আর কথা নেই। কিন্তু যদি তার পিতা মানে বাদশাহ এসে পড়ে তাহলে কিন্তু তোমার রক্ষা নেই,তোমার গর্দান যাবে। শাহজাদা বলল: সমস্যা নেই। ভাগ্যে যা আছে তাই ঘটবে।
বুড়ি বলল: ঠিক আছে নিয়ে যাবো তোমাকে, একেবারে শাহজাদির পালঙ্কের নীচে। তবে হ্যাঁ! তুমি রুমাল দিয়ে শাহজাদির হাত দুটো বেঁধে ফেলবে। যদি তোমাকে শাহজাদির পছন্দ না হয় রে বাপু! তাহলে কিন্তু খবর আছে! শাহজাদির চল্লিশজন নারী প্রহরী আছে, তারা তোমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। ওই চল্লিশ প্রহরী প্রতিদিন সকালে শাহজাদিকে ফুল দিয়ে সাজায়। বুড়ি সব জানতো। কীভাবে এবং কখন শাহজাদির কাছে যাওয়া যাবে সেটা ভালো করেই জানতো বুড়ি। সে অনুযায়ী শাহজাদাকে ঠিকঠাকমতো শাহজাদির পালঙ্কের নীচে পৌঁছিয়ে দিয়ে বুড়ি চলে গেল। শাহজাদা সুযোগ বুঝে শাহজাদির হাত রুমাল দিয়ে বেঁধে ফেলল। শাহজাদি তার কক্ষে যুবকের আগমন দেখে তার রক্ষীদের ডাকলো। #

দাশুর খ্যাপামি

দাশুর খ্যাপামি

সুকুমার রায়
ইস্কুলের ছুটির দিন । ইস্কুলের পরেই ছাত্র-সমিতির অধিবেশন হবে, তাতে ছেলেরা মিলে অভিনয় করবে । দাশুর ভারি ইচ্ছে ছিল, সে-ও একটা কিছু অভিনয় করে । একে-ওকে দিয়ে সে অনেক সুপারিশ করিয়েছিল, কিন্তু আমরা সবাই কোমর বেঁধে বললাম, সে কিছুতেই হবে না ।
সেইতো গতবার যখন আমাদের অভিনয় হয়েছিল, তাতে দাশু সেনাপতি সেজেছিল ; সেবার সে অভিনয়টা একেবারে মাটি করে দিয়েছিল । যখন ত্রিচূড়ের গুপ্তচর সেনাপতির সঙ্গে ঝগড়া করে তাকে দ্বন্দযুদ্ধে আহ্বান করে বলল, “সাহস থাকিলে খোল তলোয়ার !” দাশুর তখন “তবে আয় সম্মুখ সমরে”- ব’লে তখনি তলোয়ার খুলবার কথা । কিন্তু দাশুটা আনাড়ির মতো টানাটানি করতে গিয়ে তলোয়ার তো খুলতেই পারল না, মাঝ থেকে ঘাবরে গিয়ে কথাগুলোও বলতে ভুলে গেল । তাই দেখে গুপ্তচর আবার “খোল তলোয়ার” ব’লে হুঙ্কার দিয়ে উঠল । দাশুটা এমনি বোকা, সে অমনি “দাঁড়া, দেখছিস না বক্‌লস আটকিয়ে গেছে” ব’লে চেঁচিয়ে তাকে এক ধমক দিয়ে উঠল । ভাগ্যিস আমি তাড়াতাড়ি তলোয়ার খুলে দিলাম, তা না হলে ঐখানেই অভিনয় বন্ধ হয়ে যেত । তারপর শেষের দিকে রাজা যখন জিজ্ঞেস করলেন, “কিবা চাহ পুরস্কার কহ সেনাপতি,” তখন দাশুর বলবার কথা ছিল “নিত্যকাল থাকে যেন রাজপদে মতি,” কিন্তু দাশুটা তা না ব’লে, তার পরের আরেকটা লাইন আরম্ভ করেই, হঠাৎ জিভ কেটে “ঐ যাঃ ! ভুলে গেছিলাম” ব’লে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল । আমি কটমট করে তাকাতে, সে তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক লাইনটা আরম্ভ করল ।
তাই এবারে তার নাম হতেই আমরা জোর করে ব’লে উঠলাম, “না, সে কিছুতেই হবে না ।” বিশু বলল, “দাশু এক্‌‌টিং করবে ? তাহলেই চিত্তির !” ট্যাঁপা বলল, “তার চাইতে ভজু মালিকে ডেকে আনলেই হয় !” দাশু বেচারা প্রথমে খুব মিনতি করল, তারপর চটে উঠল, তারপর কেমন যেন মুষড়ে গিয়ে মুখ হাঁড়ি করে বসে রইল । যে কয়দিন আমাদের তালিম চলছিল, দাশু রোজ এসে চুপটি করে হলের এক কোনায় বসে বসে আমদের অভিনয় শুনত । ছুটির কয়েকদিন আগে থেকে দেখি, ফোর্থ ক্লাশের ছাত্র গণশার সঙ্গে দাশুর ভারি ভাব হয়ে গেছে। গনশা ছেলেমানুষ, কিন্তু সে চমচমৎকার আবৃত্তি করতে পারে-তাই তাকে দেবদূতের পার্ট দেওয়া হয়েছে। দাশু রোজ তাকে নানারকম খাওয়া এনে খাওয়ায়, রঙিন পেনসিল আর ছবির বই এনে দেয়, আর বলে যে ছুটির দিন তাকে একটা ফুটবল কিনে দেবে। হঠাৎ গণশার উপর দাশুর এতখানি টান হবার কোন কারণ আমরা বুঝতে পারলাম না । কেবল দেখতে পেলাম, গণশা খেলনা আর খাবার পেয়ে ভুলে ‘দাশুদা’র একজন পরম ভক্ত হয়ে উঠতে লাগল ।
ছুটির দিনে আমরা যখন অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, তখন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারা গেল । আড়াইটা বাজতে না বাজতেই দেখা গেল, দাশুভায়া সাজঘরে ঢুকে পোশাক পরতে আরম্ভ করেছে । আমরা জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে ? তুই এখানে কি করছিস ?” দাশু বলল “বাঃ, পোশাক পরব না ?” আমি বললাম, “পোশাক পরবি কিরে? তুই তো আর এক্‌টিং করবি না ।” দাশু বলল, “বাঃ, খুব তো খবর রাখ । আজকে দেবদূত সাজবে কে জানো ?” শুনে হঠাৎ আমাদের মনে কেমন একটা খটকা লাগল, আমি বললাম, “কেন গণশার কি হল ?” দাশু বলল, কি হয়েছে তা গণশাকে জিজ্ঞেস করলেই পারো ?” তখন চেয়ে দেখি সবাই এসেছে, কেবল গণশাই আসেনি । অমনি রামপদ, বিশু আর আমি ছুটে বেরোলাম গণশার খোঁজে ।
সারা ইস্কুল খুঁজে, শেষটায় টিফিনঘরের পিছনে হতভাগাকে ঝুঁজে পাওয়া গেল । সে আমাদের দেখেই পালাবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু আমরা তাকে চটপট গ্রেপ্তার করে টেনে নিয়ে চললাম । গণশা কাঁদতে লাগল, “না আমি কক্ষনো এক্‌টিং করব না, তাহলে, দাশুদা আমায় ফুটবল দেবে না ।” আমরা তবু তাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় অঙ্কের মাস্টার হরিবাবু সেখানে এসে উপস্থিত । তিনি আমাদের দেখেই ভয়ঙ্কর চোখ লাল করে ধমক দিয়ে উঠলেন, “তিন-তিনটে ধাড়ি ছেলে মিলে ঐ কচি ছেলেটার পিছনে লেগেছিস ? তোদের লজ্জাও করে না ?” ব’লেই আমাকে বিশুকে এক একটি চড় মেরে আর রামপদর কান ম’লে দিয়ে হন্‌হন্‌ করে চলে গেলেন । এই সুযোগে হাতছাড়া হয়ে গণেশ্চন্দ্র আবার চম্পট দিল । আমরাও আপমানটা হজম করে ফিরে এলাম । এসে দেখি, দাশুর সঙ্গে রাখালের মহা ঝগড়া লেগে গেছে । রাখাল বলছে, “তোকে আজ কিছুতেই দেবদূত সাজতে দেওয়া হবে না ।” দাশু বলছে, “বেশ তো, তাহলে আর কেউ সাজুক, আমি রাজা কিম্বা মন্ত্রী সাজি । পাঁচ-ছটা পার্ট আমার মুখস্থ হয়ে আছে ।” এমন সময় আমরা এসে খবর দিলাম, যে, গণশাকে কিছুতেই রাজী করানো গেল না । তখন অনেক তর্কবিতর্ক আর ঝগড়াঝাটির পর স্থির হল যে, দাশুকে আর ঘাঁটিয়ে দরকার নেই, তাকেই দেবদূত সাজতে দেওয়া হোক । শুনে দাশু খুব খুশি হল আর আমাদের শাসিয়ে রাখল যে, “আবার যদি তোরা গোলমাল করিস, তাহলে কিন্তু গতবারের মতো সব ভুণ্ডুল করে দেব ।”
তারপর অভিনয় আরম্ভ হল । প্রথম দৃশ্যে দাশু কিছু গোলমাল করেনি, খালি স্টেজের সামনে একবার পানের পিক্‌ ফেলেছিল । কিন্তু তৃতীয় দৃশ্যে এসে সে একটু বাড়াবাড়ি আরম্ভ করল । এক জায়গায় তার খালি বলবার কথা “দেবতা বিমুখ হলে মানুষ কি পারে ?” কিন্তু সে এক কথাটুকুর আগে কোত্থেকে আরও চার-পাঁচ লাইন জুড়ে দিল ! আমি তাই নিয়ে আপত্তি করেছিলাম, দাশু বলল, “তোমরা যে লম্বা বক্তৃতা কর সে বেলা দোষ হয় না, আমি দুটো কথা বেশি বললেই যত দোষ !” এও সহ্য করা যেত, কিন্তু শেষ দৃশ্যের সময় তার মোটেই আসবার কথা নয়, তা জেনেও সে স্টেজে আসবার জন্য জেদ ধরে বসল । আমরা অনেক কষ্টে অনেক তোয়াজ করে তাকে বুঝিয়ে দিলাম যে, শেষ দৃশ্যে দেবদূত আসতেই পারে না, কারণ তার আগের দৃশ্যেই আছে যে, দেবদূত বিদায় নিয়ে স্বর্গে চলে গেলেন । শেষ দৃশ্যেও আছে যে মন্ত্রী রাজাকে সংবাদ দিচ্ছেন যে, দেবদূত মহারাজাকে আশীর্বাদ করে স্বর্গপুরীতে প্রস্থান করেছেন । দাশু অগত্যা তার জেদ ছাড়ল বটে, কিন্তু বোঝা গেল সে মনে মনে একটুও খুশি হয়নি ।
শেষ দৃশ্যের অভিনয় আরম্ভ হল । প্রথম খানিকটা অভিনয়ের পর মন্ত্রী এসে সভায় হাজির হবেন । এ কথা সে কথার পর তিনি রাজাকে সংবাদ দিলেন, “বারবার মহারাজে আশিস্‌ করিয়া, দেবদূত গেল চলি স্বর্গ অভিমুখে ।” বলতে বলতেই হঠাৎ কোত্থেকে “আবার সে এসেছে ফিরিয়া” ব’লে একগাল হাসতে হাসতে দাশু একেবারে সামনে এসে উপস্থিত । হঠাৎ এ রকম বাধা পেয়ে মন্ত্রী তার বক্তৃতার খেই হারিয়ে ফেলল, আমরাও সকলে কি রকম যেন ঘাবড়িয়ে গেলাম- অভিনয় হঠাৎ বন্ধ হবার যোগার হয়ে এল । তাই দেখে দাশু সর্দারি করে মন্ত্রীকে বলল, “বলে যাও কি বলিতেছিলে ।” তাতে মন্ত্রী আরও কেমন ঘাবড়িয়ে গেল । রাখাল প্রতিহারী সেজেছিল, দাশুকে কি যেন বলবার জন্যে যেই একটু এগিয়ে গেছে, অমনি দাশু “চেয়েছিল জোর করে ঠেকাতে আমারে এই হতভাগা”- বলে এক চাঁটি মেরে তার মাথার পাগড়ি ফেলে দিল । ফেলে দিয়েই সে রাজার শেষ বক্তৃতাটা- “এ রাজ্যতে নাহি রবে হিংসা অত্যাচার, নাহি রবে দারিদ্র যাতনা” ইত্যাদি- নিজেই গড়গড় করে ব’লে গিয়ে, “যাও সবে নিজ নিজ কাজে” ব’লে অভিনয় শেষ করে দিল । আমরা কি করব বুঝতে না পেরে সব বোকার মতো হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম । ওদিকে ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠল আর ঝুপ্‌ করে পর্দাও নেমে গেল ।
আমরা সব রেগে-মেগে লাল হয়ে দাশুকে তেড়ে ধরে বললাম, “হতভাগা, দ্যাখ দেখি সব মাটি করলি, অর্ধেক কথাই বলা হল না ।” দাশু বলল, বা, তোমরা কেউ কিছু বলছ না দেখেই তো আমি তাড়াতাড়ি যা মনে ছিল সেইগুলো বলে দিলাম । তা না হলে তো আরো সব মাটি হয়ে যেত ।” আমি বললাম, তুই কেন মাঝখানে এসে গোল বাধিয়ে দিলি ? তাইতো সব ঘুলিয়ে গেল ।” দাশু বলল, রাখাল কেন বলেছিল যে আমায় জোর করে আটকিয়ে রাখবে ? তা ছাড়া তোমরা কেন আমায় গোরা থেকে নিতে চাচ্ছিলে না আর ঠাট্টা করছিলে ? আর রামপদ কেন বারবার আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছিল ?” রামপদ বলল, ওকে ধরে ঘা দু চার লাগিয়ে দে ।”
দাশু বলল, “লাগাও না, দেখবে আমি এক্ষুনি চেঁচিয়ে সকলকে হাজির করি কি না? “

শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯

অমলা

অমলা

বনফুল
অমলাকে আজ দেখতে আসবে। পাত্রের নাম অরুণ। নাম শুনেই অমলার বুকটিতে যেন অরুণ আভা ছড়িয়ে গেল। কল্পনায় সে কত ছবিই না আঁকলে। সুন্দর, সুশ্রী, যুবা–বলিষ্ঠা, মাথায় টেরি, গায়ে পাঞ্জাবি–সুন্দর সুপুরুষ।
অরুণের ভাই বরুণ তাকে দেখতে এল। সে তাকে আড়াল থেকে দেখে ভাব্‌লে–‘আমার ঠাকুরপো!’
মেয়ে দেখা হয়ে গেল। মেয়ে পছন্দ হয়েছে। একথা শুনে অমলার আর আনন্দের সীমা নেই। সে রাত্রে স্বপ্নই দেখলে!
বিয়ে কিন্তু হল না–দরে বন্‌ল না।
।।দুই।।
আবার কিছুদিন পরে অমলাকে দেখতে এল। এবার পাত্র স্বয়ং। নাম হেমচন্দ্র। এবারও অমলা লুকিয়ে আড়াল থেকে দেখলে, বেশ শান্ত সুন্দর চেহারা–ধপ্‌ধপে রঙ–কোঁকড়া চুল–সোনার চশমা–দিব্যি দেখতে।
আবার অমলার মন ধীরে ধীরে এই নবীন আগন্তকের দিকে এগিয়ে গেল।
ভাবলে–কত কি ভাবলে!
এবার দরে বন্‌ল, কিন্তু মেয়ে পছন্দ হল না।
।।তিন।।
অবশেষে মেয়েও পছন্দ হল–দরেও বন্‌ল–বিয়েও হল। পাত্র বিশ্বেশ্বর বাবু। মোটা কালো গোলগাল হৃষ্টপুষ্ট ভদ্রলোক–বি. এ. পাশ সদাগরি আপিসে চাক্‌রি করেন।
অমলার সঙ্গে যখন তাঁর শুভদৃষ্টি হল–তখন কি জানি কেমন একটা মায়ায অমলার সারা বুক ভরে গেল। এই শান্ত শিষ্ট নিরীহ স্বমী পেয়ে অমলা মুগ্ধ হ’ল।
অমলা সুখেই আছে।

কল্লা কাটা

আমরা অনেকেই কল্লাকাটা ইসুটা নিয়ে ফেসবুকে অনেক মজা করেছি, ট্রোল করেছি, ফানি কমেন্ট করেছি। এগুলো অনেকটাই ছিল সারকাজম। অনেকেই হাসির ছলে বলে ফেলেছি, তোর মাথাটা পদ্মা সেতুতে দিলে ভাল হবে। আমি নিজেও বলেছি অনেক জায়গায়। আমি দুক্ষিত এই কারনে। আজ আমাদের এই মজার কারনে কিছু বিচ্ছিন্ন কল্লা কাটার ঘটনার সাথে কিছু গুজব কিছু সারকাজম এক হয়ে দেশে আজ খুব অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আসুন এই পদ্মা সেতু আর কল্লাকাটা নিয়ে মজা আর গুজব না ছড়াই। কাউকে যদি মনে হয় ছেলেধরার মত, তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না!! একটা মাকে মারা হয়েছে ছেলেধরা ভেবে। আবার সিদ্ধিরগঞ্জে মেয়েকে দেখতে গিয়ে আরেক বাবাকেও গনপিটুনিতে মরতে হয়েছে। এমন চলতে থাকলে খুব খারাপ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যার জন্য যাবে আরো নিরীহ প্রাণ!!

কল্লাকাটা

আমরা অনেকেই কল্লাকাটা ইসুটা নিয়ে ফেসবুকে অনেক মজা করেছি, ট্রোল করেছি, ফানি কমেন্ট করেছি। এগুলো অনেকটাই ছিল সারকাজম। অনেকেই হাসির ছলে বলে ফেলেছি, তোর মাথাটা পদ্মা সেতুতে দিলে ভাল হবে। আমি নিজেও বলেছি অনেক জায়গায়। আমি দুক্ষিত এই কারনে। আজ আমাদের এই মজার কারনে কিছু বিচ্ছিন্ন কল্লা কাটার ঘটনার সাথে কিছু গুজব কিছু সারকাজম এক হয়ে দেশে আজ খুব অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আসুন এই পদ্মা সেতু আর কল্লাকাটা নিয়ে মজা আর গুজব না ছড়াই। কাউকে যদি মনে হয় ছেলেধরার মত, তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না!! একটা মাকে মারা হয়েছে ছেলেধরা ভেবে। আবার সিদ্ধিরগঞ্জে মেয়েকে দেখতে গিয়ে আরেক বাবাকেও গনপিটুনিতে মরতে হয়েছে। এমন চলতে থাকলে খুব খারাপ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যার জন্য যাবে আরো নিরীহ প্রাণ!!

#Omarfaruk

#Omarfaruk